Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

খরিফ-২ মৌসুমে সয়াবিন চাষ ও বীজ হিসেবে ব্যবহার

খরিফ-২ মৌসুমে সয়াবিন চাষ ও বীজ হিসেবে ব্যবহার
ড. মো. আব্দুল মালেক
পুষ্টিতে সমৃদ্ধ সয়াবিন বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠির আমিষ ও ক্যালরির ঘাটতি পূরণ এবং অপুষ্টি দূরীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মানুষের খাবার হিসেবে চীনে সয়াবিন নানাবিধ পদ্ধতিতে রান্না করে খাওয়া হয়। সয়ামিল চীন ও ভারতের বেশ জনপ্রিয় বিশেষ করে ভারতে নিরামিষভোজীরা সয়ামিল খেয়ে থাকেন। সয়া দুধ উন্নয়নশীল দেশে দুধের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের দেশেও উৎপাদিত সয়াবিনের বেশিরভাগই ব্যবহার হয় মাছ এবং মুরগীর খাবার ফিডমিলে এবং কিছুটা তেলও করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ফসলটির আবাদ দিন দিন বাড়ছে এবং রবি মৌসুম অর্থাৎ শীতের পাশাপাশি খরিফ-২ মৌসুম বা বর্ষাকালেও সয়াবিন চাষ হচ্ছে।
নিবিড় চাষাবাদের ফলে বাংলাদেশের মাটির স্বাস্থ্য আজ হুমকির সম্মুখীন। তাই প্রচলিত শস্য বিন্যাসে বাতাস হতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী শিমজাতীয় ফসল সয়াবিন অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করা সময়ের দাবীও বলা যায়, যা খুবই জরুরি। অপরপক্ষে সয়াবিন চাষ পরবর্তী ফসলে রাসায়নিক সারও কম লাগে। তাই বোরো ধানের আবাদ সীমিত করে সয়াবিন-রোপা আউশ-রোপা আমন শস্যবিন্যাসের প্রচলন করার যথেষ্ট সুযোগ আছে, যাতে ধানের উৎপাদন ঠিক রেখেও সয়াবিনের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। আর শস্য বিন্যাসটি কৃষকের নিকট একটি লাভজনক শস্য বিন্যাস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে আর এর সাথে দেশের ভোজ্যতেলের দেশীয় চাহিদা মিটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সয়াবিনের চাষাবাদ পদ্ধতি
মাটি : সয়াবিন সাধারণত বেলে দোআঁশ এবং দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মায়। এ ছাড়া সয়াবিন মধ্যম মাত্রার লবণাক্ততাসহিষ্ণু হওয়ায় দেশের উপকূলীয় জেলাসমূহে সয়াবিন চাষের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। খরিফ-২ বা বর্ষা মৌসুমে সয়াবিন চাষের জন্য নির্বাচিত জমি অবশ্যই পানি নিস্কাশনের সুবিধাযুক্ত এবং উঁচু হতে হবে।
বপনের সময় : রবি মৌসুমে পৌষ মাস (মধ্য-ডিসেম্বর থেকে মধ্য-জানুয়ারি পর্যন্ত) উপযুক্ত বপনকাল। খরিফ-২ অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে শ্রাবণ থেকে মধ্য ভাদ্র মাস পর্যন্ত (মধ্য-জুলাই থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত) বপন করা ভালো।
উল্লেখযোগ্য জাতসমূহ : খরিফ-২ অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে চাষযোগ্য জাতসমূহ হলো বিনাসয়াবিন-২, বিনাসয়াবিন-৩, বিনাসয়াবিন-৫, বিনাসয়াবিন-৬, বিনাসয়াবিন-৭, বারি সয়াবিন-৫, বারি সয়াবিন-৬, এবং বিএইউ সয়াবিন-২।
জমি তৈরি : জমিতে ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে আগাছামুক্ত করে জমি প্রস্তুত করে বীজ বপন করতে হবে। মই দিয়ে জমি সমান করার পর সুবিধামতো আকারে প্লট তৈরি করে নিলে সেচ প্রয়োগসহ খরিফ-২ মৌসুমে পানি নিষ্কাশনসহ আন্ত:পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। তবে বীজ বপনের সময় ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলে খরিফ-২ মৌসুমে জমি চাষের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।  
বপন পদ্ধতি : সয়াবিন সারিতে বপন করা উত্তম। তবে মাষকলাই বা মুগের ন্যায় ছিটিয়েও বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব রবি মৌসুমে ৩০ সেমি হলেও খরিফ-২ মৌসুমে জাতভেদে ৩৫-৪০ সেমি রাখতে হবে। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪-৬ সেমি রাখতে হবে। বিশেষ করে খরিফ-২ মৌসুমে বীজ বপনের সময় জমিতে পাওয়ার টিলারের সাহায্যে ২-৩টি চাষ দিয়ে পরবর্তী মই দিয়ে মাটি সমান করার পর সারিতে বীজ বপন করে প্রয়োজনে মাটি দিয়ে হালকাভাবে ঢেকে দিতে হবে, আর যদি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র সারিতে বীজ ফেলানোর পর মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।          
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি : বাংলাদেশে কৃষি পরিবেশ অঞ্চলভেদে সারের মাত্রা কম-বেশি হতে পারে। সাধারণভাবে একর প্রতি অনুমোদিত সারের মাত্রা
ইউরিয়া ২০-২৫ কেজি; টিএসপি ৬০-৭০ কেজি; এমপি  ৩৫-৪০ কেজি এবং জিপসাম ৩০-৩৫ কেজি; জিংক সালফেট ১.৫ - ২.৫ কেজি এবং জীবাণুসার (ইউরিয়ার পরিবর্তে) ৫০ গ্রাম (প্রতি কেজি বীজের জন্য) জমিতে পঁচা গোবর অথবা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করলে রাসায়নিক সার কম লাগবে। রাসায়নিক সার শেষ চাষের আগে জমিতে ছিটিয়ে দিয়ে পরে মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে।  
জীবাণুসার প্রয়োগ ও ব্যবহার পদ্ধতি: একটি পাত্রে এক কেজি পরিমাণ বীজ নিয়ে পরিষ্কার পানিতে হাত ভিজিয়ে ভিজা হাতে সয়াবিন বীজ নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে সকল বীজের উপরিভাগ ভিজে যায়। এক কেজি সয়াবিন বীজে ২০-৩০ গ্রাম চিটাগুড় বা ভাতের ঠা-া মাড় ভালোভাবে মিশানোর পর ৫০ গ্রাম জীবাণুসার মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে চিটাগুড় মিশ্রিত আঠালো বীজের গায়ে জীবাণুসার সমভাবে লেগে যায়। জীবাণুসার মিশানোর পর বীজ তাড়াতাড়ি বপন করতে হবে, কারণ জীবাণুসার পাউডার মিশানোর পর বীজ অনেকক্ষণ ফেলে রাখলে জীবাণুসারের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
পানি নিস্কাশন : রবি মৌসুমে সেচের প্রয়োজন হলেও খরিফ-২ মৌসুমে সেচের প্রয়োজন নেই বরং ভারী বৃষ্টিজনিত কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হতে পারে সেজন্য নিস্কাশনের সুব্যবস্থা রাখাই হবে।
আন্ত:পরিচর্যা : চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর প্রয়োজনে আগাছা দমন করতে হবে এবং গাছ ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে খরিফ-২ মৌসুমে ৪০-৪৫ টি গাছ রাখেই উত্তম।
রোগ-বালাই দমন
বিছাপোকা : এ পোকা সয়াবিনের মারাত্মক ক্ষতি করে। ডিম থেকে ফোটার পর ছোট অবস্থায় বিছাপোকার কীড়াগুলো একস্থানে দলবদ্ধভাবে থাকে এবং পরবর্তীতে আক্রান্ত গাছের পাতা খেয়ে জালের মতো ঝাঁঝরা করে ফেলে। এ পোকা দমনের জন্য আক্রান্ত পাতা পোকাসহ তুলে মেরে ফেলতে হবে। পাতা মোড়ানো পোকার কীড়া পাতা ভাঁজ করে ভিতরে অবস্থান করে এবং পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। উভয় পোকার আক্রমণ বেশি হলে সেভিন ৮৫ এসপি এর ৩৪ গ্রাম পাউডার প্রতি ১০ লিটার পানিতে অথবা এডভান্টেজ ২০ এসসি এর ৩০ মি.লি. প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
কা-ের মাছি পোকা : এ পোকার কীড়া কা- ছিদ্র করে ভিতরের নরম অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে আক্রান্ত গাছ দ্রুত মরে যায়। এ পোকা দমনের জন্য ডায়াজিনন ৬০ ইসি ২৫-৩০ মি. লি. প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে।
কা- পঁচা রোগ : মাটিতে অবস্থানকারী ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং কা- ও মূলে কালো দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত চারা বা গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরে যায়। গভীর চাষ এবং জমি হতে ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলে এ রোগের উৎস নষ্ট করা যায়।
হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ : সয়াবিনের সবুজ পত্র ফলকের উপরিভাগে উজ্জ্বল সোনালি বা হলুদ রঙের চক্রাকার দাগের উপস্থিতি এ রোগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সুস্থ এবং রোগমুক্ত বীজ বপনের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ অনেকটা কমানো যায়। উল্লেখ্য যে, বিনা সয়াবিন৭ হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগসহনশীল। তবে সুস্থ এবং রোগমুক্ত বীজ বপনের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ অনেকটা কমানো যায়।
পরিপক্বতা ও ফসল সংগ্রহ : খরিফ-২ মৌসুমে দেশীয় জাতগুলো পরিপক্ক হতে ৯০-১২০ দিন সময় নেয়। পরিপক্ব হলে শুটিসহ গাছ হলদে হয়ে আসে এবং পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। এ সময় গাছ কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।
সংগৃহীত গাছ শুটিসহ রোদে ৩-৪ দিন ভালোভাবে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বীজ আলাদা করে শুকিয়ে ঠা-া করে বীজ গুদামজাত করতে হবে। উল্লেখ্য সংরক্ষণের ২-৩ মাস পরই বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা কমতে শুরু করে।
পরবর্তী মৌসুমে ব্যবহারের জন্য বীজ সংরক্ষণ করতে হলে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে :
জ    মাড়াই করার পর বীজ বিশেষ যত্নসহকারে শুকাতে হবে। প্রতিদিন অল্প সময় করে অর্থাৎ ৩-৪ ঘণ্টা করে ৪-৫ দিন শুকাতে হবে। বীজ এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে বীজের আর্দ্রতা ৯% এর বেশি না থাকে। শুকানো বীজ দাঁত দিয়ে কামড় দিলে ‘কট’ শব্দ করে বীজ ভেঙে গেলে বুঝতে হবে যে বীজ ভালোভাবে শুকিয়েছে।
জ    শুকানোর পর বীজ ভালোভাবে ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং রোগাক্রান্ত পঁচা বীজ বেছে ফেলে দিতে হবে।
জ    বীজ সংরক্ষণের পূর্বে এর অংকুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
জ    বীজ সংরক্ষণের জন্য বায়ুরোধী মোটা পলিথিন ব্যাগ, প্লাষ্টিক ড্রাম, আলকাতরা মাখা মাটির মটকা বা কলসী ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মোটা পলিথিনের ব্যাগে বীজ রেখে মুখ শক্ত করে বেঁধে নিয়ে তা আবার একটি প্লাষ্টিক বা চটের বস্তায় ভরে রাখলে ভালো হয়। তবে যে পাত্রই ব্যবহার করা হোক প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মুখ ভালোভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে যেন কোনভাবেই ভিতরে বাতাস ঢুকতে না পারে। উল্লেখ্য বীজ শুকানোর পর গরম অবস্থায় সংরক্ষণ না করে ঠান্ডা হলে সংরক্ষণ করতে হবে।
সয়াবিন বীজ আর্দ্রতার প্রতি খুবই সংবেদনশীল বিধায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হলে বীজের গুণগত মান বিশেষ করে অংকুরোদগম ক্ষমতা দ্রুত কমে যায় এবং বীজ গজায় না।
খরিফ-২ মৌসুমে বীজ উৎপাদনই একমাত্র বড় সমাধান। কারণ বীজের গুণগতমান নির্ভর করে সয়াবিনের পরিপক্ব পর্যায়ে অর্থাৎ সংগ্রহকালীন বৃষ্টিপাত এবং সঠিকভাবে বীজ সংরক্ষণের উপর। আরও উল্লেখ্য যে, সংগ্রহকালীন বৃষ্টিপাতমুক্ত সংগৃহীত বীজের আর্দ্রতা কমিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করলে বীজের গুণগত মান বিশেষ করে বীজ গজানোর হার ৯০% পর্যন্ত বজায় রাখা সম্ভব।
সঠিক আর্দ্রতায় ও বায়োরোধী পাত্রে বীজ সংরক্ষণের উপর  কৃষকদের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে বীজের গুণগত মান বজায় রাখতে পারেন না, ফলে প্রতি বছরই বীজের সংকট দেখা দেয়। অপরদিকে বিএডিসি কর্তৃক উৎপাদিত বীজ চাহিদার তুলনায় খুবই কম এবং রবি মৌসুমে উৎপাদিত বীজ পরবর্তী রবি মৌসুমে ভালো গজায় না। বিএডিসি কর্তৃক খরিফ-২ মৌসুমে পর্যাপ্ত বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। খরিফ-২ মৌসুমে উৎপাদিত সয়াবিনের পুরোটাই যাতে বীজ হিসেবে উৎপাদনের উদ্যোগটি বিএডিসি এবং প্রশিক্ষিত কৃষককেই নিতে হবে। এক্ষেত্রে বীজ উৎপাদনে মাঠমান ও বীজমান অনুসরণ করার করার সঠিক উদ্যোগটিও গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : পরিচালক (গবেষণা), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ, মোবাইল নম্বর : ০১৭১২১০৬৬২০, ই- মেইল :malekbina@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon